ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত

ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত

ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত
ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত

আসছালামু আলাইকুম?বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন?আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ  একটা বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করতে যাচ্ছি। বিবাহের জন্য কেমন মেয়ে পছন্দ করা উচিত এই বিষয়ে। আজকের এই পোস্টে যা কিছু জানবেন, শিখবেন সব কিছু কোরআন ও হাদিসের আলোকে। 

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী বিয়ের জন্য যে সমস্ত বিষয়গুলো দেখে নারীদেরকে বাছাই করা উচিত, সে সম্পর্কে কিছু বিষয় বর্ণনা করা হলো।

১. ঈমান
২. দ্বীনদারী বা ধার্মিকতা
৩. পর্দানশীল ও বিনয়ী
৪. ইলম ও আমল
৫. প্রেমময়ী
৬. অধিক সন্তান জন্মদানকারী
৭. কুফু বা সমতা
৮. কুমারী

ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত

উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলো নিচে ধারাবাহিক ভাবে পেয়ে যাবেন।তার আগে আমরা ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত এই বিষয়ে কিছু হাদিস দেখে নেই ।আসুন তাহলে শুরু করা যাক।
  
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيٰى عَنْ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [১০] [মুসলিম ১৭/১৫, হাঃ ১৪৬৬, আহমাদ ৯৫২৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১৯)

চারটি গুণের মধ্যে দ্বীনদার হওয়ার গুণটি কেবল যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, এ গুণ যার নেই তার মধ্যে অন্যান্য গুণ যতই থাক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে অগ্রাধিকার যোগ্য কনে নয়। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস অনুযায়ী তো দ্বীনদারীর গুণ বঞ্চিতা নারী বিয়ে করাই উচিত নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা স্ত্রীদের কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না- কেননা এরূপ সৌন্দর্যই অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-মালের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না, কেননা এ ধনমাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে। বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্তুত একজন দীনদার কৃষ্ণাঙ্গ দাসীও কিন্তু অনেক ভাল- (ইবনে মাজাহ, বায্‌যার, বাইহাকী)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল - বিয়ের জন্য কোন্‌ ধরনের মেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন- যে স্ত্রীকে দেখলে সে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, তাকে যে কাজের আদেশ করা হয় তা সে যথাযথ পালন করে এবং তার নিজের স্বামীর ধন মালের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের বিপরীত কোন কাজই করে না- (মুসনাদে আহমাদ)।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যখন তোমাদের নিকট এমন লোক বিবাহের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও আখলাক তোমরা পছন্দ কর। তখন বিবাহ দিয়ে দিও (মাল-সম্পদের দিকে আর লক্ষ্য করো না।) যদি তা না কর তবে দেশে ফিৎনা ও ব্যাপক ফাসাদ দেখা দিবে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ হাদীসের ব্যাখ্যা হল, ফিৎনা-ফাসাদ দেখা দেয়ার কারণ হলো- যখন মানুষের দ্বীনদারী ও আখলাক দেখে বিয়ে না দেয়া হবে বরং তার অর্থ সম্পদ কেমন আছে, সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি কেমন আছে, এসব দেখতে যাওয়া হবে তখন সংগত কারণেই অধিকংশ মেয়ে স্বামীহীন এবং অধিকাংশ পুরুষ স্ত্রীহীন থেকে যাবে। ফলে যিনা-ব্যভিচার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সমাজের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই এর সত্যতা ষোল আনা মেলে। ছোট-বড়, কিশোরী-যুবতী, বালিগা-নাবালিগা, বিধবা-সধবা এমনকি অবুঝ কচি শিশুরা পর্যন্ত আজ যত্রতত্র ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ধর্ষণ একটি দৈনন্দিন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ।

ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত

১. “ঈমান”
বিবাহের জন্য সবার প্রথম পাত্র ও পাত্রী উভয়ের ঈমানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাওহীদে বিশ্বাসী, নামাযী এবং সুন্নতের অনুসারী এমন কারো জন্য বেনামাযী, কবর, মাযার আর পীর পূজারী, মনপূজারী অথবা দুনিয়া পূজারী, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা প্রচলিত শিরকি-কুফুরীর রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কাউকে বিয়ে করা যাবেনা। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ঈমান গ্রহণ করে। নিশ্চয়ই একজন মুসলমান ক্রীতদাসী, মুশরেক স্বাধীনা নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও (দুনিয়ার চাকচিক্য, সৌন্দর্য অথবা সম্পদের কারণে) তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেক পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাস একজন স্বাধীন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা (কাফের/মুশরেক) তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর আদেশের মাধ্যমে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।” [সুরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত ২২১ এর তর্জমা]
২. “দ্বীনদারী বা ধার্মিকতা”
দুনিয়াতে মুসলমান অনেক ধরণেরই আছে কিন্তু, এই দুনিয়ার মাঝে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে একজন নেককার স্ত্রী। সম্পদ বা সৌন্দর্যের লোভে বেদ্বীন বা দ্বীনের মাঝে ত্রুটি আছে এমন কাউকে বিয়ে করলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের অনেক কল্যান ও শান্তি থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এ প্রসংগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “মানুষ সাধারণত নারীদের মাঝে চারটি গুণ দেখে বিবাহ করে, তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। (কিন্তু এমন করবেনা), তোমরা বিয়ের জন্য ধার্মিক নারীদেরকে অগ্রাধিকার দাও। তোমরা যদি ধার্মিক নারীদেরকে অগ্রাধিকার না দাও, তাহলে অবশ্যই তোমাদের দুই হাত ধূলায় ধূসরিত হবে (অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সেটা তোমাদের জন্য মন্দ ও অকল্যান ডেকে আনবে)।
[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।]

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন- দুনিয়ার সব জিনিসই ভোগ সামগ্রী আর সবচেয়ে উত্তম সামগ্রী হচ্ছে নেক চরিত্রের স্ত্রী- (মুসনাদে আহমাদ)।
উপরের হাদিস থেকে যে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়া, পরহেযগারী, দীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

৩. “পর্দানশীল ও বিনয়ী”
বেপর্দা নারী মানেই অহংকারী, অহংকারী কারো জন্য স্বামীর আনুগত্য বজায় রাখা খুবই কষ্টকর, আর এদের মাঝে খুব কম সংখ্যক নারীই জান্নাতে প্রবেশ করবে। অথচ শিক্ষিত/অশিক্ষিত, আলেম হোক আর জালেম হোক, শতকরা ১০০ ভাগ পুরুষ স্ত্রীর কাছ থেকে আনুগত্য কামনা করে, এবং স্ত্রীর অবাধ্যতাকে ঘৃণা করে।
“একবার এক সফরে রাসুল (সাঃ) সাহাবাদেরকে নিয়ে একটা পাহাড়ে উঠলেন। সেখানে হঠাত তারা একটা কাক দেখতে পেলেন, যার পা ও ঠোট ছিলো লাল। এই ধরণের কাক আসলে খুবই বিরল, দেখতে পাওয়া যায়না বললেই চলে। সাহাবারা এতো বিরল একটা জিনিস দেখে আশ্চর্য হয়ে বলাবলি করতে লাগলেন। রাসুল সাঃ তখন বললেন, এইরকম কাকের মাঝে লাল পয ও লাল ঠোটওয়ালা কাক যেমন অত্যন্ত বিরল, তেমনি নারীদের মাঝে যারা বেপর্দা চলাফেরা করবে তাদের মাঝে খুব কম সংখ্যক নারীই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
৪. “ইলম ও আমল”
ইলম ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা বা বিপদ-আপদ ও ফেতনার সময়ে ঈমান নিয়ে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর, যা বর্তমান যুগে খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে। সংগী/সংগিনীর যদি ইলমের ব্যপারে ত্রুটি থাকে, তাহলে তার প্রভাব আপনার উপরেও পড়বে। রাসুল সাঃ বলেছেন, “একজন মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপরেই আছে।”
থিওরিটিক্যালি স্বামী/স্ত্রী একজন অপরজনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু হওয়ার কথা। সুতরাং, জ্ঞানী, ইসলামী জীবন-যাপনে আগ্রহী ও অভ্যস্ত এমন কাউকে বিয়ে করতে চেষ্টা করুন যে আপনার দ্বীনের ব্যপারে সাহায্যকারী হবে, বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেনা।
“প্রেমময়ী” এবং “অধিক সন্তান জন্মদানকারী”
“এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলল, আমি একজন সুন্দরী এবং উঁচু বংশের রমনীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে কোন সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা) । আমি কি তাকে বিবাহ করব? তিনি বলেন, না। অতঃপর, সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো, তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করলেন। পরে তৃতীয়বার সে ব্যক্তি এলে তিনি বলেন, তোমরা এমন স্ত্রীলোকদের বিবাহ করবে, যারা স্বামীদের অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান প্রসব করে। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতের উপর) গর্ব প্রকাশ করব।”
৫. “প্রেমময়ী”
মানুষ স্বামী/স্ত্রীর কাছ থেকে যা কামনা করে, তা না পেলে অনেকেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আর এই কুপথে না গেলেও, সারাজীবনের জন্য সেটা একটা অভিশাপ হিসেবেই থেকে যাবে। তাই, নারী পুরুষ উভয়ের উচিত সংগির হক্ক পূর্ণভাবে আদায় করার ব্যপারে সজাগ থাকে।
৬. “অধিক সন্তান জন্মদানকারী”
রাসুল সাঃ পুরুষদেরকে অধিক সন্তান জন্মদানকারী নারীদেরকে বিয়ে করার উতসাহিত করেছেন, এর দ্বারা উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে যা নিয়ে কেয়ামতের দিন রাসুল সাঃ গর্ব করবেন। এছাড়া সন্তানদেরকে হাদিসে ‪#‎রিযক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিছু ওলামা বলেছেন, কোন নারী অধিক সন্তানদানকারী হবে কিনা, সেটা বোঝার জন্য তার মা ও খালার সন্তানের সংখ্যা কত, তার দিকে লক্ষ্য করতে বলেছেন। কোন মেয়ের মা ও খালা যদি অধিক সন্তান জন্মদানকারী হয়ে থাকে, তাহলে আশা করা যেতে পারে সেও অধিক সন্তান জন্মদানকারী।
হযরত মাকাল বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমরা বিবাহ কর অতি সোহাগিনী ও অধিক সন্তান প্রসবিনী নারীকে। কেননা আমি তোমাদের (সংখ্যাধিক্যের দ্বারা অন্যান্য উম্মতের উপর গর্বকরব। (দেখুন ঃ আবু দাউদ শরীফ)
আলোচ্য হাদীস থেকে আমরা দুটি বিষয় জানতে পারলাম। (১) বিবাহ করার জন্য এমন মেয়ে অনুসন্ধান করা মুস্তাহাব, যার প্রকৃতিতে মহব্বত করার যোগ্যতা রয়েছে অর্থাৎ যে মন উজাড় করে ভালবাসতে পার। (২) ঐ মহিলাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত যার বংশে বেশি বেশি সন্তান হওয়ার ধারাবহিকতা রয়েছে।
৭. “কুফু বা সমতা”
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং ‘কুফু’ (সমতা) দেখে বিবাহ কর।”
[ইবনু মাজাহঃ ১৯৬৮; হাদীসটি সহীহ শায়খ আলবানী। সিলসিলা সহীহাহঃ ১০৬৭]
বিয়ের সময় নারী ও পুরুষের মাঝে অবশ্যই কুফু বা সমতার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ। দাড়ী কামাতে অভ্যস্ত, হারাম ইনকাম এমন কোন পুরুষের সাথে যদি ক্বুরানের হা’ফিজাহ কোন নারীকে বিয়ে দেওয়া হয়, আর বিয়ের পরে স্বামী তাকে মডার্ণ ড্রেস পড়তে বাধ্য করে, হিন্দী গান শোনানোর বায়না ধরে তাহলেতো প্রবলেম। আবার কোন নারী যদি বিয়ের পরে যেকোন উপায়ে স্বামীকে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করতে চাপ দেয়, দাঁড়ি রাখা যাবেনা বায়না ধরে, মা-বাবার হক্ক আদায়ে বাঁধা দেয়…এই সংসারে আর যাই হোক সুখ নামক নামক অচিন পাখিটা কখনো ধরা দেবেনা। তাই বিয়ের পূর্বে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কুফু রক্ষা করা উচিৎ।
৮. কুমারী মেয়েকে বিয়ে করুন। 
নারীদেরকে আল্লাহ তাআ’লা প্রেমময়ী, সহজাত লজ্জাবোধ ও কমনীয়তা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা পর্দানশীল কুমারী নারীদের মাঝে সবচাইতে বেশি থাকে। এইজন্য আল্লাহ তাআ’লা জান্নাতী নারীদেরকে চিরকুমারী করে সৃষ্টি করেছেন। রাসুল সাঃ বলেছেন, “তোমরা কুমারী মেয়েদেরকে বিয়ে করো, কারণ তারা মিষ্টিভাষী, অধিক সন্তান জন্মদানকারী এবং অল্পে তুষ্ট হয়ে থাকে।” [তাবারানি, হাদীসটি হাসান সহীহ]
কুমারী অল্পতে তুষ্ট হয় অর্থাৎ সে ধন-সম্পদ এবং সহবাসের ক্ষেত্রে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে। কেননা সে স্বামীর মাল সম্পর্কে বেশী জানে না এবং সহবাস সম্পর্কীয় বিষয়েও সে থাকে অজ্ঞ বিধায় কুমারী মহিলা যেটুকুই লাভ করে সেটুকুই যথেষ্ট মনে করে।
পূর্বে বিয়ে হয়েছে, এমন কেউ স্বভাবতই ম্যাচিউরড হবে এবং অনেক হিসাবী হবে। তবে অকুমারী মেয়েদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয় কোন বিষয়, এমন নয়। স্বয়ং রাসুল সাঃ এর স্ত্রীদের মাঝে মা আয়িশাহ রাঃ ছাড়া অন্য সব স্ত্রী ছিলেন অকুমারী। এছাড়া একজন সাহাবী অকুমারী মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন যাতে করে সে তার ৭ জন ছোট বোনদের দেখাশোনা করতে পারে।
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَخِي، عَنْ سُلَيْمَانَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ لَوْ نَزَلْتَ وَادِيًا وَفِيهِ شَجَرَةٌ قَدْ أُكِلَ مِنْهَا، وَوَجَدْتَ شَجَرًا لَمْ يُؤْكَلْ مِنْهَا، فِي أَيِّهَا كُنْتَ تُرْتِعُ بَعِيرَكَ قَالَ ‏ "‏ فِي الَّذِي لَمْ يُرْتَعْ مِنْهَا ‏"‏‏.‏ تَعْنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَتَزَوَّجْ بِكْرًا غَيْرَهَا‏.‏
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মনে করুন আপনি একটি ময়দানে পৌঁছেছেন, সেখানে একটি গাছ আছে যার কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন একটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন্‌ গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এ কথার উদ্দেশ্য হল - নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন কুমারীকে বিয়ে করেননি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৬)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাঃ এর যুগে এক মহিলাকে বিবাহ করলাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি বলেন, হে জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বিধবা। তিনি বললেন, কেন তুমি কুমারী মেয়ে বিবাহ করলে না, তাহলে তার সাথে তুমি রসিকতা ও কৌতুক করতে পারতে? আমি বললাম, আমার কয়েকটি বোন আছে। তাই আমি আমার ও আমার বোনদের মধ্যে একটি কুমারী মেয়ের প্রবেশ করাকে সংকটজনক বোধ করলাম। তিনি বলেন, তাতো ভালো কথা।
[বুখারীঃ ২০৯৭, মুসলিমঃ ৭১৫, তিরমিযীঃ ১১০০]
أَبُوْ النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ حَدَّثَنَا سَيَّارٌ عَنِ الشَّعْبِيِّ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَفَلْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْ غَزْوَةٍ فَتَعَجَّلْتُ عَلٰى بَعِيرٍ لِي قَطُوْفٍ فَلَحِقَنِي رَاكِبٌ مِنْ خَلْفِي فَنَخَسَ بَعِيرِي بِعَنَزَةٍ كَانَتْ مَعَه“ فَانْطَلَقَ بَعِيرِي كَأَجْوَدِ مَا أَنْتَ رَاءٍ مِنَ الإِبِلِ فَإِذَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا يُعْجِلُكَ قُلْتُ كُنْتُ حَدِيثَ عَهْدٍ بِعُرُسٍ قَالَ أَبِكْرًا أَمْ ثَيِّبًا قُلْتُ ثَيِّبًا قَالَ فَهَلاَّ جَارِيَةً تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ قَالَ فَلَمَّا ذَهَبْنَا لِنَدْخُلَ قَالَ أَمْهِلُوْا حَتّٰى تَدْخُلُوْا لَيْلاً أَيْ عِشَاءً لِكَيْ تَمْتَشِطَ الشَّعِثَةُ وَتَسْتَحِدَّ الْمُغِيبَةُ.
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে জিহাদ থেকে ফিরছিলাম। আমি আমার দুর্বল উটটি দ্রুত চালাতে চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় এক আরোহী আমার পিছন থেকে আমার উটটিকে ছড়ি দিয়ে খোঁচা দিলে উটটি দ্রুত চলতে লাগল যেমন ভাল ভাল উটকে তুমি চলতে দেখ। ফিরে দেখি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, জাবির, তোমার এত তাড়াতাড়ি করার কারণ কী? আমি উত্তর দিলাম, আমি নতুন বিয়ে করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কুমারী, না বিধবা? আমি উত্তর দিলাম, বিধবা। তিনি বললেন, তুমি কুমারী মেয়ে বিয়ে করলে না? যার সঙ্গে খেলা-কৌতুক করতে আর সেও তোমার সঙ্গে খেলা-কৌতুক করত। বর্ণনাকারী বলেন, যখন আমরা মদীনাহ্‌য় প্রবেশ করব, এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর এবং রাতে প্রবেশ কর, যেন অনুপস্থিত স্বামীর স্ত্রী নিজের অবিন্যস্ত কেশরাশি বিন্যাস করতে পারে এবং লোম পরিষ্কার করতে পারে। [৪৪৩; মুসলিম ৩৩/৫৬, হাঃ ১৯২৮, আহমাদ ১৩১১৭](আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৮)

বন্ধুরা যদি এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকে অবশ্যই কমেন্টে বলবেন।    
                               
Previous Post Next Post