রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মাদানী জীবন

রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মাদানী জীবন
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মাদানী জীবন

★★★ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মাদানী জীবনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।
এক. ১লা হিজরী সনের ১২ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খৃষ্টাব্দের ২৭ শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার হ’তে ৬ষ্ঠ হিজরীর যিলক্বা‘দ মাসে অনুষ্ঠিত হোদায়বিয়ার সন্ধি পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর। এই সময় কাফের ও মুনাফিকদের মাধ্যমে ভিতরে ও বাইরের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও সশস্ত্র হামলা সমূহ সংঘটিত হয়। ইসলামকে সমূলে উৎখাত করার জন্য এ সময়ের মধ্যে সর্বমোট ৪৮টি বড় ও ছোটখাট অনেকগুলি যুদ্ধ সংঘটিত ও অভিযান পরিচালিত হয়।
দুই. মক্কার মুশরিকদের সঙ্গে সন্ধি চলাকালীন সময়। যার মেয়াদকাল  হিজরী থেকে  হিজরীর রামাযান মাসে মক্কা বিজয় পর্যন্ত প্রায় দু’বছর। এই সময়ে প্রধানতঃ ইহুদী ও তাদের মিত্রদের সাথে বড়-ছোট ২১টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
তিন. ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর থেকে ১১ হিজরীতে রাসূলের মৃত্যু পর্যন্ত তিন বছর। এই সময়ে দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। চারদিক থেকে গোত্রনেতারা প্রতিনিধি দল নিয়ে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদেশী রাজন্যবর্গের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র প্রেরণ করেন। এই সময়ে মানাত, উযযা, সুওয়া‘ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ মূর্তিগুলি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই সময় হোনায়েন যুদ্ধ এবং রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে তাবূক যুদ্ধে গমন সহ বড়-ছোট ১৩টি অভিযান পরিচালিত হয়। এভাবে মাদানী জীবনের ১০ বছরে ছোট-বড় ৮২টি যুদ্ধ ও অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে ইসলাম রাষ্ট্রীয় রূপ পরিগ্রহ করে এবং তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি সমূহকে চ্যালেঞ্জ করে টিকে থাকার মত শক্তিশালী অবস্থানে উপনীত হয়।
মদীনার সামাজিক অবস্থা:
মক্কা ও মদীনার সামাজিক অবস্থার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য ছিল এই যে, মক্কার সমাজ ব্যবস্থাপনায় কুরায়েশদের একক প্রভুত্ব ছিল। ধর্মীয় দিক দিয়ে তাদের অধিকাংশ মূর্তি পূজারী ছিল।
পক্ষান্তরে মদীনায় সমাজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কারু একক কর্তৃত্ব ছিল না। ধর্মীয় দিক দিয়েও তারা এক ছিল না বা বংশধারার দিক দিয়েও এক ছিল না। ইহুদীদের চক্রান্তে আউস ও খাযরাজের মধ্যে বহুদিন ধরে যুদ্ধ চলে আসছিল। সর্বশেষ বু‘আছের যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ধ্বংসকারী। যার পরেই তাদের আমন্ত্রণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করেন।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়াছরিবে এই সময় মূলতঃ দুদল লোক বসবাস করত। একদল ছিল ইয়াছরিবের আদি বাসিন্দা পৌত্তলিক মুশরিক সম্প্রদায়। যারা প্রধানতঃ আউস ও খাযরাজ দু’গোত্রে বিভক্ত ছিল।
দ্বিতীয় ছিল ইহুদী সম্প্রদায়। খৃষ্টানরা যাদেরকে মেরে-কেটে ফিলিস্তীন ও সিরিয়া এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা শেষনবীর আগমনের অপেক্ষায় এবং তাঁর নেতৃত্বে পুনরায় তাদের হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার আকাংখায় ইয়াছরিবে হিজরত করে এসেছিল বহুদিন পূর্বে। এরা ছিল হিব্রুভাষী। কিন্তু পরে আরবী ভাষী হয়। এদের প্রসিদ্ধ গোত্র ছিল তিনটি :
(১) বনু ক্বায়নুক্বা‘
(২) বনু নাযীর ও
(৩) বনু কুরায়যা।
এরা মদীনার উপকণ্ঠে তৈরী স্ব স্ব দুর্ভেদ্য দুর্গসমূহে বসবাস করত। সেই সময় ইয়াছরিবে পৌত্তলিক মুশরিক ও ইহুদীদের বাইরে কিছু সংখ্যক খৃষ্টানও বসবাস করত। চতুর্থ আরেকটি উপদল গড়ে উঠেছিল খাযরাজ গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন উবাই ইবনে সুলূলের নেতৃত্বে।
মাক্কী ও মাদানী জীবনের প্রধান পার্থক্য সমূহ:
মাক্কী ও মাদানী জীবনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য ছিল এই যে, মক্কায় জন্মস্থান হলেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানগণ সেখানে ছিলেন দুনিয়াবী শক্তির দিক দিয়ে পরাজিত ও নির্যাতিত। পক্ষান্তরে মাদানী জীবনের প্রথম থেকেই নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বাগডোর ছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানদের হাতে। এখানে বিরোধীরা ছিল নিষ্প্রভ। ফলে মদীনার অনুকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে ইসলামকে পূর্ণতা দানের সুযোগ আসে। আল্লাহ্‌ বলেন -الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ
لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيْنًا،
‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপরে আমার অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।
ইহুদীদের কপট চরিত্র:
হিজরতের পূর্ব থেকেই ইহুদীরা মক্কায় রাসূলের আবির্ভাব সম্পর্কে জানত। এখন যখন তিনি মদীনায় হিজরত করে এলেন এবং মানুষের পারস্পরিক ব্যবহার, লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা ও পবিত্রতার পথ অবলম্বন করলেন। যার ফলে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও হিংসা-হানাহানিতে বিপর্যস্ত ইয়াছরিবের গোত্র সমূহের মধ্যকার শীতল সম্পর্ক ক্রমেই উষ্ণ-মধুর ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকল, তখন তা ইহুদীদের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল।
দুটি দৃষ্টান্ত:
(১) ইহুদী নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব সম্পর্কে তার কন্যা ছাফিয়াহ যিনি পরবর্তীতে রাসূলের স্ত্রী হয়ে উম্মুল মুমেনীন রূপে বরিত হন, তিনি বলেন, আমি আমার বাপ-চাচাদের নিকটে তাদের সকল সন্তানের মধ্যে অধিক প্রিয় ছিলাম এবং সকলের আগেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে তারা আদর করতেন। যেদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রথম ইয়াছরিবে আগমন করেন ও ক্বোবায় বনু আমর বিন আওফের গোত্রে অবতরণ করেন, সেদিন অতি প্রত্যুষে আমার পিতা ও চাচা রাসূলের দরবারে উপস্থিত হন। অতঃপর সন্ধ্যার দিকে তারা ক্লান্ত ও অবসন্নচিত্তে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন।
আমি ছুটে তাদের কাছে গেলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম তারা এত চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন যে, আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। এ সময় আমি আমার চাচাকে বলতে শুনলাম তিনি আমার আববাকে বলছেন, ‘ইনিই কি তিনি? আববা বললেন,‘আল্লাহর কসম, ইনিই তিনি’। চাচা বললেন, ‘এখন তাঁর সম্পর্কে আপনার চিন্তা কী’? আববা বললেন, ‘স্রেফ শত্রুতা। আল্লাহর কসম যতদিন আমি বেঁচে থাকব’।
(২) আব্দুল্লাহ বিন সালাম-এর অনুসারীগণ : ক্বোবার পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ইয়াছরিবে বনু নাজ্জার গোত্রে অবতরণ করেন, তখন সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন ইহুদীদের সবচেয়ে বড় আলেম আব্দুল্লাহ বিন সালাম। তিনি রাসূলকে এমন কিছু প্রশ্ন করলেন, যা নবী ব্যতীত কারু পক্ষে বলা সম্ভব নয়। রাসূলের নিকট থেকে সঠিক জবাব পেয়ে তিনি সাথে সাথে মুসলমান হয়ে গেলেন।
তিনি রাসূলকে সাবধান করে দিলেন এই মর্মে যে, ‘ইহুদীরা হল মিথ্যা অপবাদ দানকারী এক ঘৃণিত সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করার আগেই যদি তারা আমার ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টি জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার নিকটে আমার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিবে’।
তখন তিনি আব্দুল্লাহকে পাশেই আত্মগোপন করতে বলে ইহুদীদের ডেকে পাঠালেন। তারা এলে তিনি তাদের নিকটে আব্দুল্লাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তারা বলল, ‘আমাদের নেতা এবং নেতার পুত্র নেতা।
আমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ، আচ্ছা যদি আব্দুল্লাহ মুসলমান হয়ে যায়? তারা দুবার বা তিনবার বলল,‘আল্লাহ তাকে এ থেকে রক্ষা করুন’! অতঃপর আব্দুললাহ বিন সালাম গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চকণ্ঠে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন। এটা শোনামাত্র ইহুদীরা বলে উঠলো, ‘আমাদের মধ্যকার সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি ও নিকৃষ্ট ব্যক্তির পুত্র’। [4]
আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) তখন তাদেরকে বললেন, ‘হে ইহুদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, নিশ্চয়ই তোমরা ভালভাবেই জানো যে, ইনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি অবশ্যই সত্য সহ আগমন করেছেন’। জবাবে তারা বলল,‘তুমি মিথ্যা বলছ’।[5]
মসজিদে নববীর নির্মাণ:
মদীনায় প্রবেশ করে রাসূলের উটনী যে স্থানে প্রথম বসে পড়েছিল, সেই স্থানটিই হল মসজিদে নববীর কেন্দ্রস্থল। স্থানটির মালিক ছিল দু’জন ইয়াতীম বালক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দশ দীনার মূল্যে স্থানটি খরীদ করলেন। আবুবকর (রাঃ) মূল্য পরিশোধ করলেন। [6] ১৬ বা ১৭ মাস পরে ক্বিবলা পরিবর্তিত হলে উত্তর দেওয়ালের বদলে দক্ষিণ দেওয়ালের দিকে ক্বিবলা ঘুরে যায়। কেননা মক্কা হল মদীনা থেকে দক্ষিণ দিকে। মসজিদ নির্মাণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজ হাতে ইট ও পাথর বহন করেন।
নবীগৃহ নির্মাণ : এই সময় মসজিদের পাশে একই নিয়মে কতগুলি ঘর তৈরী করা হয়। এগুলি ছিল নবীপত্নীগণের জন্য আবাসিক কক্ষ। এগুলি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আবু আইয়ূবের গৃহ ছেড়ে সপরিবারে এখানে চলে আসেন।
আযানের প্রবর্তন : মসজিদ নির্মিত হওয়ার পর মুছল্লীদের পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে আহবানের জন্য পরামর্শ সভা বসে। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। পরে একই রাতে ১১ জন ছাহাবী বর্তমান আযানের স্বপ্ন দেখেন।
পরদিন আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন আবদে রবিবহী (রাঃ) প্রথমে এসে রাসূলকে স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনালে তিনি উচ্চকণ্ঠের অধিকারী বেলালকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন। আযানের ধ্বনি শুনে কাপড় ঘেঁষতে ঘেঁষতে ওমর (রাঃ) দৌড়ে এসে বললেন ‘হে রাসূল! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, সেই আল্লাহর কসম করে বলছি, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি’।
আনছার ও মুহাজিরগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন:
মসজিদে নববীর নির্মাণ কার্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়, তাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আনাস বিন মালেকের গৃহে আনছার ও মুহাজির উভয় দলের নেতৃস্থানীয় ৯০ জন ব্যক্তির এক আনুষ্ঠানিক বৈঠক আহবান করেন, যেখানে উভয় দলের অর্ধেক অর্ধেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের (المؤاخاة الإسلامية) বন্ধন স্থাপন করেন এই শর্তে যে, ‘তারা পরস্পরের দুঃখ-বেদনার সাথী হবেন এবং মৃত্যুর পরে পরস্পরের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন’। তবে উত্তরাধিকার লাভের শর্তটি ২য় হিজরীতে সংঘটিত বদর যুদ্ধের পর অবতীর্ণ আয়াতের মাধ্যমে রহিত হয়ে যায়। যেখানে বলা হয়, وَأُوْلُوا الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِيْ كِتَابِ اللهِ إِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ-
‘বংশ সম্পর্কীয় আত্মীয়গণ পরস্পরের অধিক হকদার আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে অধিক জ্ঞাত’(আনফাল ৮/৭৫)। তবে উত্তরাধিকার লাভের বিষয়টি রহিত হলেও তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিল অটুট এবং অনন্য। বিশ্ব ইতিহাসে এইরূপ নিঃস্বার্থ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের কোন তুলনা নেই। দু’একটি দৃষ্টন্ত প্রদত্ত হল-
ভ্রাতৃত্বের নমুনা:
(১) আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুহাজির আব্দুর রহমান বিন আওফকে আনছার সা‘দ বিন রাবী‘-এর সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দেন। অতঃপর সা‘দ তার মুহাজির ভাইকে বললেন, ‘আনছারদের মধ্যে আমি সর্বাপেক্ষা ধনী। আপনি আমার সম্পদের অর্ধেক গ্রহণ করুন এবং আমার দুজন স্ত্রীর মধ্যে যাকে আপনি পসন্দ করেন বলুন, তাকে আমি তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত শেষে আপনি তাকে বিবাহ করবেন’।
আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দো‘আ করলেন, ‘আল্লাহ আপনার পরিবারে ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন’! আপনি আমাকে আপনাদের বাজার দেখিয়ে দিন। অতঃপর তাঁকে বনু ক্বায়নুক্বা-র বাজার দেখিয়ে দেওয়া হল। তিনি সেখানে গিয়ে পনীর ও ঘি-এর ব্যবসা শুরু করলেন এবং কিছু দিনের মধ্যে সচ্ছলতা লাভ করলেন। এক সময় তিনি বিয়ে-শাদীও করলেন। [12]
(২) খেজুর বাগান ভাগ করে দেবার প্রস্তাব : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আনছারগণ একদিন রাসূলের কাছে এসে নিবেদন করল যে, আপনি আমাদের খেজুর বাগানগুলি আমাদের ও মুহাজির ভাইগণের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করে দিন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এতে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন। তখন তারা বলল যে, তবে এমন করুন যে, মুহাজির ভাইগণ আমাদের কাজ করে দেবেন এবং আমরা ফলের অংশ দিব’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এতে সম্মত হলেন। [13]
(৩) জমি বণ্টনের প্রস্তাব : বাহরায়েন এলাকা বিজিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এখানকার পতিত জমিগুলি আনছারদের অনুকূলে বরাদ্দ দিতে চাইলে তারা আপত্তি করে বলল, আমাদের মুহাজির ভাইদের উক্ত পরিমাণ জমি বরাদ্দ দেওয়ার পরে আমাদের দিবেন। তার পূর্বে নয়। [14]
ফুটনোট:
[1] আর রাহীক্ব ১৩৫।
[2] বুখারী হা/৩৯৪১, ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়, ৫২ অনুচ্ছেদ।
[3] ফাৎহুল বারী হা/… ৭/২৭৫।
[4] বুখারী, মিশকাত হা/৫৮৭০, ‘রাসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা অধ্যায়, ‘মু‘জিযা’ অনুচ্ছেদ।
[5] বুখারী হা/৩৯১১ ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়, ৪৫ অনুচ্ছেদ।
[6] কুতুবুদ্দীন, তারীখুল মদীনা আল-মুনাওয়ারাহ, পৃঃ ৯২।
[7] তারীখুল মদীনা আল-মুনাওয়ারাহ, পৃঃ ৯২-৯৩।
[8] তারীখুল মদীনা আল-মুনাওয়ারাহ, পৃঃ ৯৩।
[9] তাহযীবুত তাহযীব ১২/২৪০ পৃঃ; মিশকাত হা/৮৩৯।
[10] আর-রাহীক্ব পৃঃ ১৮৪।
[11] ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪৬৯; ঐ, আওন সহ হা/৪৯৫।
[12] বুখারী, হা/৩৭৮০-৮১ ‘ছাহাবীগণের মর্যাদা’ অধ্যায়, ৩৩ অনুচ্ছেদ ও হা/২৬৩০ ‘হেবা’ অধ্যায়, ৩৫ অনুচ্ছেদ।
[13] ঐ, হা/৩৭৮২।
[14] বুখারী হা/২৩৭৬ ‘জমি সেচ করা’ অধ্যায়, ১৪ অনুচ্ছেদ।
                               
Previous Post Next Post