রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকাল

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকাল
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকাল

★★★ বিদায় হে আমার বন্ধুঃ অন্তিম যাত্রার পথে মহানবী
আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পূর্ণতা লাভ করেছে, আরব জাহান এখন ইসলামের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। এ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিন্তা-চেতন, অনুভব-অনুভূতি, বাহ্যিক আচার-আচরণ ও কথা বার্তায় এমন নিদর্শন প্রকাশ পেতে লাগলো যা থেকে স্পস্টতই বুঝা যাচ্ছিলো যে, তিনি এ পৃথিবীর অধিবাসীদের শীঘ্রই বিদায় জানাবেন।
উদহরণস্বরূপ বলা হয় যে, দশম হিজরীর রমযান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ দিন এ’তেকাফ পালন করেন অথচ অন্যান্য রমযানে পালন করতেন দশদিন। হযরত জিবরাঈল (আ.) এ বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র কোরআন শরীফ দু’বার পাঠ করে শোনালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছিলেন, আমি জানি না, সম্ভবত এ বছরের পর এই জায়গায় তোমাদের সাথে আমি আর কখনো মিলিত হতে পারব না।
জামরায়ে আকাবার কাছে তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে হজ্জ এর নিয়মাবলী শিখে নাও, কেননা আমি এ বছরের পর সম্ভবত আর কখনো হজ্জ করতে পারব না। আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১০,১১,১২ই যিলহজ্জের সময়ে সূরা নসর নাযিল হয়েছিলে। এরপর তিনি বুঝে ফেলেছিলেন যে, এবার দুনিয়া থেকে তার বিদায় নেয়ার পালা। এই সূরা নাযিল হওয়া মানে হচ্ছে তার মৃত্যুবরণের একটা আগাম ইত্তেলা (সংবাদ) দেয়া।
একাদশ হিজরীর সফর মাসের শুরতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহুদ প্রান্তরে গমন করেন। সেখানে তিনি শহীদানদের জন্যে এমনভাবে দোয়া করলেন যেন জীবিতরা মৃতদের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করছে। এরপর ফিরে এস তিনি মিম্বরে বসে বললেন, আমি তোমাদরে কর্মতৎপরতার আমীর এবং তোমাদের জন্যে সাক্ষী।
আল্লাহর শপথ এখন আমি আমার হাউয অর্থাৎ হাউযে কাওছার দেখতে পাচ্ছি। আমাকে সমগ্র বিশ্ব জাহান এবং এর ধন-ভান্ডারের চাবি প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহর শপথ, আমি এ আশঙ্কা পোষণ করি না যে, তোমরা আমার পরে শেরেক করবে বরং এ আশঙ্কা করছি যে, তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে।
একদিন মধ্য রাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতুল বাকির কবরস্থানে যান এবং সেখানে মুর্দাদের জন্যে দোয়া করেন। সে দোয়ায় তিনি বলেন, হে কবরবাসীরা, তোমাদের প্রতি সালাম। মানুষ যে অবস্থায় রয়েছে তার চেয়ে তোমরা যে অবস্থায় রয়েছো তা তোমাদের জন্যে শুভ হোক। ফেতনা আঁধার রাতের অংশের মতো একের পর এক চলে আসছে। পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের চেয়ে মন্দ। এরপর কবরবাসীদরে এ সুখবর প্রদান করেন যে, আমি ও তোমাদরে সাথে এস মিলিত হবো।
একাদশ হিজরীর ২৯ শে সফর, রোববার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতুল বাকিতে একটি জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। ফেরার পথে মাথাব্যথা শুরু হেয় এবং উত্তাপ এতে বেড়ে যে, মাথায় বাঁধা পট্টির ওপর দিয়েও তাপ অনুভব করা গেছে। এটা ছিলো মরণ অসুখের শুরু। তিনি সেই অসুস্থ অবস্থায় এগার দিন নামায পড়ান।অসুখের মোট মেয়াদ ছিলো তের অথবা চৌদ্দ দিন।
জীবনের শেষ সপ্তাহ:
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন। এ সময়ে তিনি পবিত্র সহধর্মিনীদের কাছে জিজ্ঞাসা করতেন যে, আমি আগামীকাল কোথায় থাকবো? আমি আগামীকাল কোথায় থাকবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ জিজ্ঞাসার তাৎপর্য তাঁর সহধর্মিনীরা বুঝে ফেললেন, তাই তারা বললেন, আপনি যেখানে থাকতে ইচ্ছা করেন হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সেখানেই থাকবেন।
এরপর তিনি হযরত আয়েশা (রা.)এর ঘরে স্থানান্তরিত হলেন। স্থানান্তরের সময় হযরত ফযল ইবনে আব্বাস এবং হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) প্রিয় নবীকে ভর দিয়ে নিয়ে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামরে মাথায় পট্টি বাঁধা, পবিত্র চরণযুগল মাটিতে হেঁচড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি হযরত আয়েশা (রা.)-এর ঘরে স্থানান্তরিত হলেন এবং জীবনের শেষ সপ্তাহ সেখানেই কাটালেন।
হযরত আয়েশা (রা.)রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে শিক্ষা করা দোয়া সমূহ পাঠ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দেহে ফুঁ দিতেন এবং বরকতের আশায় তাঁর পবিত্র হাত নিজের দেহে ফেরাতেন।
মৃত্যুর পাঁচদিন আগে চাহার শোম্বা অর্থাৎ বুধবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহের উত্তাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেলো। এতে তাঁর কষ্ট বাড়লো। তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। এ সময় বললেন, বিভিন্ন কূপের সাত মশক পানি আমার ওপর ঢালো, আমি যেন লোকদের কাছে গিয়ে ওসিয়ত করতে পারি। এ জন্যে বসিয়ে দেয়া হলো এবং দেহে এতো পরিমাণ পানি ঢালা করা হলো যে, তিনি বললেন, ব্যস, ব্যস, অর্থাৎ আর প্রয়োজন নেই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর কিছুটা সুস্থ বোধ করলেন এবং মসজিদে গেলেন। মাথায় পট্টি বাঁধা ছিলো। মিম্বরে আরোহণ করে বসে কিছু ভাসণ দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম আশেপাশে সমবেত ছিলেন। তিনি বললেন, ইহুদি নাছারদের ওপর আল্লাহর লানত, কেননা তারা তাদের নবীর কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, ইহুদী নাছারাদের ওপর আল্লাহর মার, কেননা তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। [1]
তিনি আরো বললেন, তোমরা আমার কবরকে পূজা করার উদ্দেশ্যে মূর্তিতে পরিণত করো না। [2]
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদলার জন্যে নিজেকে পেশ করে বললেন, আমি যদি কারো পিঠে চাবুকের দ্বারা আঘাত করে থাকি তবে এই হচ্ছে আমার পিঠ সে যেন বদলা নিয়ে নেয়। যদি কাউকে অসম্মান করে থাকি তবে, সে যেন আমার কাছ থেকে বদলা গ্রহণ করে।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরের ওপর থেকে নীচে নেমে এলেন এবং যোহরের নামায পড়ালেন। এরপর তিনি পুনরায় মিম্বরে উপবেশন করলেন এবং শত্রুতা ইত্যাদি সম্পর্কে বলা কথা পুনরায় বললেন। একজন লোক বললেন, আপনার কাছে আমি তিন দেরহাম পাওনা রয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযল ইবনে আব্বাস (রা.)- কে সেই ঋণ পরিশোধের আদেশ দিলেন। এরপর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে ওসিয়ত করলেন।
তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আনসারদের ব্যাপারে ওসিয়ত করছি, কেননা তারা আমার অন্তরও কলিজা। তারা নিজেদের যিম্মাদারী পূর্ণ করেছে কিন্তু তাদের অধিকার সমূহ বাকি রয়ে গেছে। কাজেই তাদের মধ্যেকার নেককারদের গ্রহণ করবে এবং বদকারদের ক্ষমা করবে।
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেন, অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেন, মানুষ বাড়তে থাকবে কিন্তু আনসারদের সংখ্যা কমতে থাকবে, এমনকি তারা খাবারের লবণের পরিমাণের মত হয়ে পড়বে। কাজেই তোমাদের মধ্যেকার যারা কোন লাভজনক বা ক্ষতিকর কাজের দায়িত্ব পাবে তারা আনসারদের মধ্যেকার নেককারদের গ্রহণ করবে এবং বদকারদের ক্ষমা করবে। [3]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর বরলেন, একজন বান্দাকে আল্লাহ তায়ালা এ এখতিয়ার দিয়েছেন যে, বান্দাহ ইচ্ছে করলে দুনিয়ার শান শওকত থেকে যা চাইবো আল্লাহ তায়ালা তাকে দেবেন অথবা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা থেকে যা কিছু ইচ্ছা নিতে পারবে। সেই বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা গ্রহণ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণানা করেণ যে, একথা শোনার পর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রা.) কাঁদতে শুরু করলেন এবং আমি নিজের মা’বাপসহ আপনার ওপর কোরবান হচ্ছি।
একথা শুনে আমরা অবাক হলাম। লেকেরা বললো, এই বুড়োকে দেখো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো একজন বান্দা সম্পর্কে বলছিলেন যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এখতিয়ার দিয়েছেন তা থেকে যা ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারে অথবা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা থেকে যা ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারে অথচ এই বুড়ো বলছে, আমি নিজের মা-বাপসহ আপনার ওপর কোরবান হচ্ছি।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়ে যে, আল্লাহ তায়ালা যে বান্দাকে এখতিয়ার দিয়েছে তিনি ছিলেন স্বয়ং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেদিন এটাও কারো বুঝতে বাকি থাকেনি যে, হযরত আবু বকর (রা.) হচ্ছেন আমাদের মধ্যেকার সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। [4]
এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বন্ধুত্ব এবং অর্থ সম্পদের ত্যাগ স্বীকারে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশী এহসানা যেন রয়েছে আবু বকরের। যদি আমি আমার প্রতিপালক ব্যতিত অন্য কাউকে খলিল/বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকে গ্রহণ করতাম। কিন্তু তার সাথে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক বিদ্যমান। মসজিদে কোন দরজা খোলা রাখা না হয়, সকল দরজা যেন বন্ধ করা হয় শুধু আবু বকরের দরজা বন্ধ করা যাবে না। [5]
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের চারদিন আগে বৃহস্পতিবার, তিনি খুবিই কষ্ট পাচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি বললেন, আমি তোমাদরে একটি লিখন লিখে দিচ্ছি, এরপর তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না। সেই সময় ঘরে কয়েকজন লোক উপস্থি ছিলেন। তাদের মধ্যে হযরত ওমর (রা.)-ও ছিলেন। তিনি বললেন, আপনি অসুখে খুবই কষ্ট পাচ্ছেন এবং আমাদের কাছে পবিত্র কোরআন রয়েছে।
আমাদের জন্যে এই কেতাবই যথেষ্ট। একথা শুনে ঘরে উপস্থিত সাহাবদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলো। কেউ কেউ বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা লিখে দিতে চাচ্ছিলেন, তা লিখিয়ে নেয়া হোক।
কেউ কেউ বলছিলেন, না দরকার নেই, হযরত ওমর (রা.) যা বলছেন, সেটাই ঠিক। মতভেদ এক সময়ে কথা কাটাকাটিতে পরিণত হলো এবং শোরগোল বেড়ে গেলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। [6]
সেদিনই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনটি ব্যাপারে ওসিয়ত করলেন।
প্রথমত ইহুদি, নাসার এবং মোশরেকদের জাযিরাতুল আরব থেকে বের করে দেবে।
দ্বিতীয়ত আগন্তুক প্রতিনিধিদলের সাথে আমি যে রকম ব্যবহার করতাম সেই রকম ব্যবহার করবে।
তৃতীয় কথাটি বর্ণনাকারী ভূলে গেছেন, সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন সুন্নাহ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা অথবা উসামা বাহিনীকে প্রেরণ করার কথা বলেছেন, অথবা তিনি বলেছিলেন, নামায এবং তোমাদের অধীনস্থ অর্থাৎ দাসদাসীদের প্রতি খেয়াল রাখবে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুখের তীব্রতা সত্তেও ওফাতের চারদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকল নামাযে নিজেই ইমামতি করেন। সেদিনের মাগরিবের নামাযেও তিনি ইমামতি করেছিলেন।
এশার সময় রোগ এতো বেড়ে গেলো যে, মসজিদে যাওয়ার শক্তি রইল না। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, জ্বী না হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ওরা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামস বললেন, আমার জন্যে পাত্রে পানি লও।
আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। এরপর উঠতে চাইলেন কিন্তু বেহুঁশ হয়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরে এলে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছে? তাঁকে জানানো হল যে, জ্বী না হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ওরা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই অবস্থা হলো। তিনি গোসল করলেন এবপর উঠতে চাইলেন, কিন্তু বেহুঁশ হয়ে গেলেন।
এরপর তিনি হযরত আবু বকর (রা.)-কে খবর পাঠালেন, তিনি যেন নামায পড়িয়ে দেন। এরপর নবী করিমের অসুস্থতার অন্য দিনগুলোতেও হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা. নামায পড়ালেন। [8] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সতের ওয়াক্ত নামাযে ইমামতি করেছিলেন। [7]
হযরত আয়েশা (রা.) তিন অথবা চারবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ মর্মে আরয করেন যে, ইমামতির দায়িত্ব হযরত আবু বকর (রা.) ব্যতিত অন্য কাউকে দেয়া হোক। তিনি ভাবছিলেন, লোকেরা হযরত আবু বকর ছিদ্কি (রা.) ব্যাপারে মন্দ ধারণ পোষণ না করুক। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবারই সহধর্মিনীর আবেদন প্রত্যাখান করে বলেন, তোমরা সবাই ইউসুফ (আ,)-এর সাথীদের মত হয়ে গিয়েছো। [9]
আবু বকরকে আদেশ দাও তিন যেন নামায পড়ান।
শনি অথবা রোববার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুটা সুস্থ বোধ করলেন। দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে যোহরের নামাযের জন্যে মসজিদে গেলেন। সে সময় হযরত আবু বক র সিদ্দিক (রা.) সাহাবাদের নামায পড়াচ্ছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে তিনি পেছনে সরে আসতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশারা করলেন যে পেছনে সরে আসার দরকার নেই।
যাদের কাঁধে ভর দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে এসেছিলেন তাদের বললেন, আমাকে আবু বকরের পাশে বসিয়ে দাও। এরপর তাঁকে হযরত আবু বকরের ডানপাশে বসিয়ে দেয়া হলো। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তখন নামাযে নবী করিমের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একতেদা করছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে তাকবির শোনাচ্ছিলেন। [10]
ওফাতের একদিন আগে রোবরাব দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সব দাস-দাসীকে মুক্ত করে দিলেন। তাঁর কাছে সে সময় সাত দিনার ছিলো, সদকা করলেন, তাঁর অস্ত্র-শস্ত্র মুসলমানদের হেবা করে দিলেন। রাতের বেলা চেরাগ জ্বালানোর জন্যে হযরত আয়েশা (রা.) এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে তেল ধার আনলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বর্ম একজন ইহুদীর কাছে তিরিশ সাআ অর্থাৎ ৭৫ কিলো যবের বিনিময়ে বন্ধক ছিলো।
মহা জীবনের শেষ দিন:
হযরত আনাস (রা.) বলেন, সেদিন ছিলো সোমবার, মুসলমানর ফযরের নামায আদায় করছিলেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইমামতির দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা হযরত আয়েশা সিদ্দিকার হুজরার পর্দা সরালেন এবং সাহাবাদের কাতারবাঁধা অবস্থায় নামায আদায় করতে দেখে মৃদু হাসলেন। এদিকে হযরত আবু বকর (রা.) কিছুটা পেছনে সরে গেলেন যেন নামাযের কাতারে রসূল শামিল হতে পারে।
তিনি ভেবেছিলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শামিল হতে পারেন এবং হয়তো নামাযে আসতে চান। হযরত আনাস (রা.) বলেন, হঠাৎ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে সাহাবারা এতো আনন্দিত হলেন যে, নামাযের মধ্যেই ফেতানায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো অর্থাৎ তারা নামায ছেড়ে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শারীকিক অবস্থার খবর নিতে চাচ্ছিলেন।
কিন্তু রসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত দিয়ে সাহাবাদের ইশারা করলেন, তারা যেন নামায পুর করেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরার ভেতর চলে গেয়ে পর্দা ফেলে দিলেন।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অন্য কোন নামাযের সময় আসেনি। দিনের শুরুতে চাশত এর নামাযের সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.)-কে কাছে ডেকে কানে কানে কিছু কথা বললেন। তা শুনে হযরত ফাতেমা যোহরা কাঁদতে লাগলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় ফাতেমার কানে কিছু কথা বললেন, এবার হযরত ফাতেমা (রা.) হাসতে লাগলেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, পরবর্তী সময়ে আমি হযরত ফাতেমাকে তাঁর কান্না ও হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, প্রথমবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, এই অসুখেই আমার মৃত্যু হবে। একথা শুনে আমি কাঁদলাম। এরপর তিনি আমাকে কানে কানে বললেন, আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সর্ব প্রথম তুমিই আমার অনুসারী হয়ে পরলোকে যাবে। একথা শুনে আমি হাসলাম। [11]
সে সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যন্ত্রণার তীব্রতা থেকে হযরত ফাতেমা (রা.) হঠাৎ বলে ফেললেন, হায় আব্বাজানের কষ্ট। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার আব্বার আজকের পর আর কোন কষ্ট নেই। [12]
নবী (স.) হযরত হাসান ও হোসেন (রা.) ডেকে চম্বুন করলেন এবং তাদের ব্যাপারে কল্যাণের ওসিয়ত করলেন। সহধর্মিনীদের ডাকলেন এবং তাদেরকেও ওয়ায-নসিহত করলেন।
এদিকে কষ্ট ক্রমেই বাড়ছিলো। বিষ-এর প্রভাবও প্রকাশ পাচ্ছিলো। খয়বরে তাঁকে এই বিষ খাওয়ানো হয়েছিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়েশা (রা.)-কে বলতেন, হে আয়েশা খয়বরে আমি যে বিষ মিশ্রিত খাবার খেয়েছিলাম তার প্রতিক্রিয়ার কষ্ট সব সময় অনুভব করছি। এখন মনে হচ্ছে, সেই বিষের প্রভাব যেন আমার প্রাণের শিরা কাটা যাচ্ছে। [13]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যও ওসিয়ত করেন। তাদের তিনি বলেন, ‘আস সালাত, আস সালাত অমা মালাকাত আইমানুকুম। অর্থাৎ নামায নামায এবং তোমাদের অধীনস্থ দাসদাসী।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা কয়েকবার উচ্চারণ করলেন। [14]
মৃত্যুকালীন অবস্থা:
ওফাতকালীন অবস্থা শুরু হলো। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেহে ঠেস দিয়ে ধরে রাখলেন, তিনি বলেন, আল্লাহর একটি নেয়ামত আমার ওপর এই যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে, আমার হিসেবের দিনে, আমার কোলের ওপর শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাতের সময়ে আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং আমার থুথু একত্রিত করেন।
ঘটনা ছিলো এই যে, আবুদর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) এসছিলেন, সে সময় তার হাতে ছিল মেসওয়াক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার গায়ের ওপর হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। আমি লক্ষ্য করপ্রলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াকের প্রতি তাকিয়ে আছেন। আমি বুঝলাম যে, তিনি মেসওয়া চান। বললাম আপনার জন্যে নেব কি?
তিনি মাথা নেড়ে ইশারা করলেন। আমি মেসওয়াক এনে তাঁকে দিলাম। কিন্তু শক্ত অনুভুত হলো। বললাম, আপনার জন্যে নরম করে দেবো? তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। আমি দাঁত দিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি বেশ ভালোভাবে মেসওয়াক করেন। তাঁর সামনে একটি পাত্রে পানি ছিলো।তিনি হাত ভিজিয়ে চেহারা মুছুছিলেন এবং বলছিলেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। মৃত্যু বড় কঠিন। [15]
মেসওয়াক শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত অথবা আঙ্গুল তুললেন। এ সময় তাঁর দৃষ্টি ছিলো ছাদের দিকে। উভয় ঠোঁট তখন নড়ছিলো। তিনি বিড় বিড় করে কি যেন বলছিলেন। হযরত আয়েশা (রা) মুখের কাছে কান পাতলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলছিলেন, হে আল্লাহ তায়ালা। নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎ ব্যক্তি যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ, আমাকে তাদের দলভূক্ত কর, আমাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ তায়ালা আমাকে মার্জনা করো, আমার ওপর রহম করো এবং আমাকে ‘রফিকে আলায়’ পৌছে দাও। হে আল্লাহ তায়ালা! রফিকে আলা ! [16]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেন। এর পরপরই তাঁর হাত ঝুঁকে পড়লো এবং তিনি পরম প্রিয়ের সান্বিদ্ধে চলে গেলেন। ‘ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।’ অর্থাৎ আমরা সবাই আল্লাহর জন্যে এবং তাঁর কাছেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
এ ঘটনা ঘটেছিলো একাদশ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার চাশত এর নামাযের শেষ সময়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স ছিলো তখন তেষট্টি বছর চারদিন।
দাফনের প্রস্তুতি:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাফনের জন্যে কাফন পরানোর আগেই তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনয়নের প্রশ্নে সাহাবাদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধে দেখা দিলো। ছাকিফা বনি সাআদায় মোহাজের ও আনসারদের মধ্যে বাদানুবাদ হলো। অবশেষে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর খেলাফতের ব্যাপারে সাবই একমত হলেন। একাজে সোমবারের বাকি দিন কেটে গেলো। রাত এসে গেলো।
সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। পরদিন সকাল হলো, সেদিন ছিলো মঙ্গলবার। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দেহ সেই ইয়েমেনী চাদরে আবৃত ছিলো। ঘরের লোকেরা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
পরদিন মঙ্গলবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ অনাবৃত না করেই তাঁকে গোসল দেয়া হলো। যারা গোসল করিয়েছিলেন তারা হলেন হযরত আব্বাস, হযরত আলী, হযরত আব্বাসের দুই পুত্র ফযল এবং ছাকাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুক্ত করে দেয়া দাস শাকরান, হযরত উসামা ইবনে যায়েদ এবং আওস ইবনে খাওলা (রা.)।
হযরত আব্বাস ও তাঁর দুই পুত্র রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাশ ফেরাচ্ছিলেন। হযরত উসামা এবং হযরত শাকরান পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। হযরত আলী (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গোসল দিচ্ছিলেন। হযরত আওস (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের বুকের সাথে চেপে রাখছিলেন।
গোসল দেয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনখানি ইয়েমেনী সাদা চাদর দিয়ে কাফন দেয়া হয়। এতে কোর্তা এবং পাগড়ি ছিলো না। [17]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুধু চাদর দিয়েই জড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোথায় দাফন করা হবে, সে সম্পর্কেও সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সকল নবীকেই যেখানে তুলে নেয়া হয়েছে, সেই জায়গায় দাফন করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত, হওয়ার পর হযরত আবু তালহা (রা.) সেই বিছানা ওঠালেন, যে বিছানায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন। সেই বিছানার নীচে কবর খনন করা হয়।
এরপর দশজন দশজন করে সাহাবা হুজরায় প্রবেশ করে পর্যায়ক্রমে জানাযার নামায আদায় করেন। এ নামাযে কেউ ইমাম হননি। সর্বপ্রথম বনু হাশেম গোত্রের লোকেরা নামায আদায় করেন। এরপর মোহজের এরপর আনসাররা, এরপর অন্যান্য পুরুষ এরপর মহিলা, এবং সবশেষে শিশুরা জানাযার নামায আদায় করেন।
জানাযার নামায আদায়ে মঙ্লবার পুরো দিন অতিবাহিত হয়। মঙ্লবার দিবাগত রাত্রে প্রিয় নবী মোহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাফন করা হয়। তাঁর পবিত্র দেহ কবরের ভেতর রাখা হয়।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঠিক কখন দাফন করা হয় আমরা জানতে পারিনি। তবে বুধবার রাতের মাঝামাঝি সময়ে কিছু শব্দ পেয়েছিলাম। [18]
মোহাম্মদ তো রসূল ছাড়া কিছুই নয়, তার আগেও বহু রসূল গত হয়ে গেছে। সে যদি মরে যায় অথবা তাকে যদি কেউ মেরে ফেলে, তাহলে কি (তার আদর্শ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে? (জেনে রেখো) যে ব্যক্তিই (এভাবে) মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আল্লাহর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। (সূরাঃ আল ইমরান-১৪৪)
ফুটনোট:
[সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড, পৃ-৫২, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, পৃ-৩৬০]
[মুয়াত্তা ইমাম মালেক, পৃ-৬৫]
[সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড, পৃ-৫২৬]
[সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড, পৃ-৫৩৬]
[বোখারী,মুসলিম, প্রথম খন্ড, পৃ-৫১৬, মেশকাত দ্বিতীয় খন্ড, পৃ-৫৪৬-৫৫৪]
[বোখারী ও মুসলিম, বোখারী ১ম খন্ড, পৃ-২২,৪২৭, ২য় খন্ড, পৃ-৬৩৮]
[বোখারী ও মুসলিম। মেশকাত প্রথম খন্ড, পৃ-১০২]
[বোখারী ও মুসলিম। মেশকাত ১ম খন্ড, পৃ-১০২]
[হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনায় যে সকল মহিলা আজিজ মেছেরের স্ত্রীকে অভিযুক্ত করছিল তারা দৃশ্যত এরূপ করছিল কিন্তু হযরত ইউসুফকে দেখে যখন তারা আঙ্গুল কেটে ফেলল তখন বোঝা গেল যে, ওরা সবাই হযরত ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি নিবেদিত প্রাণ। অর্থাৎ তাদের মুখে এক মনে এক । এখানেও অবস্থা সেরকম। দৃশ্যত বলা হচ্ছির যে, হযরত আবু বকর সিদ্দিকের মন নরম,আপনার জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়াতে শুরু করলে কান্নার প্রকোপে কেরাত পাঠ করতে পারবে না।
কিন্তু মনে মনে ঠিকই একথা ছিল যে, যদি খোদা না করুন রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-সম্পর্কে সবাই মন্দ ধারণ পোষণ করবে এবং তাকে অপয়া বলে অপবাদ দেবে। এসব কারণে হযরত আয়েশা সিদ্দিকার আবেদনের সাথে অন্যান্য নবী সহধর্মিনীরাও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একই আবেদন জানান। এ কারণে নবী (স.) বলেন যে, তোমরা সবাই হচ্ছো নবী ইউসুফের ভাইদের মতো।]
[সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড, পৃ-৯৮-৯৯]
[বোখারী ২য় খন্ড, পৃ-৬৩৮]
[কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, আলোচনা এবং সুসংবাদ দেয়ার এ ঘটনা নবী জীবনের শেষ দিনে নয় বরং শেষ সপ্তাহে ঘটেছিল। দেখুন রহমতুল লিল আলামীন, ১ম খন্ড,পৃ-২৮২]
[সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৬৩৭]
[সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৬৩৭]
[সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৬৪০]
[সহীহ বোখারী, মরযে নবী অধ্যায় এবং নবী জীবনের শেষ কথা অধ্যায়, ২য় খন্ড, পৃ-৬৩৮-৬৪১]
[সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড, পৃ-১৬৯, সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড, পৃ-৩০৬]
[শেখ আব্দুল্লাহ রচিত মুখতাছার সীরাতে রসূল পৃ-৪৭১, এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন বোখারী শরীফের মরজুন নবী অধ্যায়। আরো দেখুন ফতহুল বারী, সহীহ মুসলিম, মেশকাত। এছাড়া ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃ-৬৪৯-৬৬৫, তালকীহ, পৃ-৩৮-৩৯, রহমতুল লিল আলামীন ১ম খন্ড,পৃ-২৭৭-২৮৬]
                               
Previous Post Next Post