হাবশায় হিজরত এবং আবু তালিবের নিকটে কুরায়েশ নেতাদের আগমন

হাবশায় হিজরত এবং আবু তালিবের নিকটে কুরায়েশ নেতাদের আগমন

হাবশায় হিজরত এবং আবু তালিবের নিকটে কুরায়েশ নেতাদের আগমন
হাবশায় প্রথম হিজরত (রজব ৫ম বর্ষ):
চতুর্থ নববী বর্ষের মাঝামাঝি থেকে মুসলমানদের উপরে যে নির্যাতন শুরু হয় ৫ম নববী বর্ষের মাঝামাঝি নাগাদ তা চরম আকার ধারণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই মযলূম মুসলমানদের রক্ষার জন্য উপায় খুঁজতে লাগলেন। তিনি অনেক আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী হাবশার ন্যায়নিষ্ঠ খৃষ্টান রাজা আছহামা নাজ্জাশী (أصحمة النجاشى) -র প্রশংসা শুনে আসছিলেন যে, তার রাজ্যে মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করে।
সেমতে নবুঅতের পঞ্চম বর্ষের রজব মাসে হযরত ওছমান (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ১২ জন পুরুষ ও  জন মহিলার প্রথম দলটি রাতের অন্ধকারে অতি সঙ্গোপনে হাবশার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়। এই দলে রাসূলের কন্যা ‘রুক্বাইয়া’ ছিলেন। রাসূল (সাঃ) বলেন,
‘তারা দু’জন ছিল ইবরাহীম ও লূত্ব-এর পরে আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারী প্রথম দল’।
হাবশায় ২য় হিজরত (সম্ভবত : যুলক্বা‘দাহ ৫ম বর্ষ):
হাবশার বাদশাহ কর্তৃক সদ্ব্যবহারের খবর শুনে কুরায়েশ নেতারা মুসলমানদের উপরে যুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিল এবং কেউ যাতে আর হাবশায় যেতে না পারে, সেদিকে কড়া নযর রাখতে লাগল। কারণ এর ফলে তাদের দুটি ক্ষতি ছিল।
এক. বিদেশের মাটিতে কুরায়েশ নেতাদের যুলুমের খবর পৌঁছে গেলে তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। 
দুই. সেখানে গিয়ে মুসলমানেরা সংঘবদ্ধ হয়ে শক্তি সঞ্চয় করার সুযোগ পাবে। যাই হোক তাদের অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি এবং কড়া নযরদারী সত্তেবও ৮২ বা ৮৩ জন পুরুষ এবং ১৮ বা ১৯ জন মহিলা দ্বিতীয়বারের মত হাবশায় হিজরত করতে সমর্থ হন।
আবু তালিবের নিকটে কুরায়েশ নেতাদের আগমন (৬ষ্ঠ নববী বর্ষের মাঝামাঝি):
(১) কুরায়েশ নেতাগণ সম্মিলিতভাবে আবু তালিবের কাছে এলেন। এই দলে ছিলেন আবু সুফিয়ান ছাখর ইবনু হারব, ওৎবা ও শায়বাহ বিন রাবী‘আহ, আবু জাহল আমর ইবনু হেশাম (যিনি ‘আবুল হাকাম’ উপনামে পরিচিত ছিলেন), অলীদ বিন মুগীরাহ, নুবাইহ ও মুনাবিবহ বিন হাজ্জাজ ও ‘আছ বিন ওয়ায়েল এবং আরও কয়েকজন। তারা এসে বললেন, ‘আপনার ভাতিজা আমাদের উপাস্যদের গালি দিয়েছে, আমাদের দ্বীনকে দোষারোপ করেছে, আমাদের জ্ঞানীদের বোকা ঠাউরেছে এবং আমাদের বাপ-দাদাদের পথভ্রষ্ট মনে করেছে।’
এক্ষণে হয় আপনি তাকে বিরত রাখুন। অথবা আমাদের ও তার মাঝ থেকে সরে দাঁড়ান। কেননা আপনিও আমাদের ন্যায় তার আদর্শের বিরোধী। সেকারণ আমরা আপনাকে তার ব্যাপারে যথেষ্ট মনে করি’। ধৈর্য্যের সঙ্গে তাদের কথা শুনে আবু তালেব তাদেরকে নম্র ভাষায় বুঝিয়ে বিদায় করলেন।
২য় বার আগমন (৬ষ্ঠ নববী বর্ষ):
(২) মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং নির্যাতনের ভয়ে সকলে পার্শ্ববতী খৃষ্টান রাজ্য হাবশায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়ায় নেতারা প্রমাদ গুনলেন। অতঃপর বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এবং হিজরতকারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমর ইবনুল আছ ও আবু জাহলের বৈপিত্রেয় সহোদর ভাই আবদুল্লাহ বিন রাবী‘আহকে নাজ্জাশীর দরবারে প্রেরণ করেন। কিন্তু তারা নিরাশ হয়ে ফিরে আসেন।
নেতারা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মুহাম্মাদের দাওয়াত ও প্রচারাভিযানকে একেবারেই বন্ধ করে দিতে পুনরায় আবু তালেবের কাছে এলেন এবং বললেন, আমাদের মধ্যে বয়সে, সম্মানে ও পদমর্যাদায় আপনি বিশেষ স্থানের অধিকারী। আমরা চেয়েছিলাম যে, আপনি আপনার ভাতিজাকে বিরত রাখবেন।
কিন্তু আপনি তাকে বিরত রাখেননি। আল্লাহর কসম! আমরা আর এ ব্যক্তির ব্যাপারে ধৈর্য রাখতে পারছি না। এক্ষণে হয় আপনি তাকে বিরত রাখুন, নয়তো আমরা তাকে ও আপনাকে এ ব্যাপারে একই পর্যায়ে নামাবো। যতক্ষণ না আমাদের দুপক্ষের একটি পক্ষ ধ্বংস হয়’। গোত্র নেতাদের এই চূড়ান্ত হুমকি শুনে আবু তালেব দুশ্চিন্তায় পড়লেন। অতঃপর রাসূলকে ডেকে এনে বললেন
‘হে আমার ভাতিজা! তোমার বংশের নেতারা আমার কাছে এসেছেন এবং এই এই কথা বলছেন।… অতএব তুমি আমার উপরে এমন বোঝা চাপিয়ো না, যা বহন করার ক্ষমতা আমার নেই’। চাচার এই কথা শুনে তিনি তাকে ছেড়ে যাচ্ছেন ধারণা করে সাময়িকভাবে বিহবল নবী আল্লাহর উপরে গভীর আস্থা রেখে বলে উঠলেন,
‘হে চাচা! যদি আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্র এনে দেওয়া হয় তাওহীদের এই প্রচার বন্ধ করার বিনিময়ে, আমি তা কখনোই পরিত্যাগ করব না। যতক্ষণ না আল্লাহ এই দাওয়াতকে বিজয়ী করেন অথবা আমি তাতে ধ্বংস হয়ে যাই’।
বলেই তিনি অশ্রুপূর্ণ নয়নে চলে যেতে উদ্যত হলেন। পরম স্নেহের ভাতিজার এই অসহায় দৃশ্য দেখে বয়োবৃদ্ধ চাচা তাকে পিছন থেকে ডাকলেন। তিনি তার দিকে মুখ তুলে তাকাতেই চাচা বলে উঠলেন, ‘যাও ভাতিজা! তুমি যা খুশী প্রচার কর। আল্লাহর কসম! কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে ওদের হাতে তুলে দেব না’।
আবু তালিবের এই কথা শুনে নেতারা বিফল মনোরথ হয়ে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুশীতে বুক বাঁধলেন।
লোভনীয় প্রস্তাব:
শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মুহাম্মাদের দাওয়াত ও প্রচারাভিযানকে একেবারেই বন্ধ করে দিতেকঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তারা রাসূলকে লোভ দেখানোর ফাঁদে আটকানোর চিন্তা করেন। সে মোতাবেক তারা মক্কার ধনীশ্রেষ্ঠ ওৎবা বিন রাবী‘আহকে সরাসরি রাসূলের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়ে পাঠান। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কা‘বা চত্বরে একাকী বসেছিলেন। তখন কুরায়েশ নেতাদের অনুমতি নিয়ে ওৎবা তাঁর কাছে গিয়ে বসলেন এবং বললেন, হে ভাতিজা! তোমার এই নতুন দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্য যদি সম্পদ উপার্জন হয়, তাহলে তুমি বললে আমরা তোমাকে আরবের সেরা ধনী বানিয়ে দেব।
আর যদি তোমার উদ্দেশ্য নেতৃত্ব লাভ হয়, তাহলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে আমাদের নেতা বানিয়ে দেব। আর যদি আরবের বাদশাহ হতে চাও, তাহলে আমরা তোমাকে বাদশাহ বানিয়ে দেব। এমনকি তুমি যদি সুন্দরী স্ত্রী কামনা কর, তবে আমরা তোমার জন্য আরবের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী স্ত্রীর ব্যবস্থা করে দেব। আর যদি মনে কর, তোমার মাথার চিকিৎসা প্রয়োজন, তাহলে আমরাই তোমার জন্য সারা আরবের সেরা চিকিৎসককে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আমাদের একটাই মাত্র দাবী, তুমি তোমার ঐ নতুন দ্বীনের দাওয়াত পরিত্যাগ কর।
জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমার সম্পর্কে আপনি যেসব কথা বললেন, এগুলির একটিও সত্য নয়। আমার মাল-ইযযত-হুকুমত, সুন্দরী স্ত্রী বা নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব কিছুই প্রয়োজন নেই। আমার মাথার চিকিৎসারও কোন প্রয়োজন নেই। আপনার প্রস্তাবসমূহের জওয়াবে আমি কেবল কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলি পেশ করতে চাই।
অতঃপর তাকে তিনি ৫৪ আয়াত বিশিষ্ট সূরা ফুছছিলাত/হা-মীম সাজদাহ পাঠ করে শুনাতে লাগলেন। কুরআন শুনতে শুনতে ওৎবা মন্ত্রমুগ্ধের মত হয়ে গেলেন। এক বর্ণনায় এসেছে, যখন তিনি ১৩ ত আয়াত পাঠ করলেন, তখন ওৎবা ভয়ে রাসূলের মুখের উপরে হাত রেখে গযব নাযিলের ভয়ে বলে উঠলেন,
আল্লাহর দোহাই! তুমি তোমার সম্প্রদায়ের উপরে রহম কর’। অতঃপর ৩৮তম আয়াতের পর রাসূল সিজদা করলেন এবং উঠে বললেন, ‘আবুল ওয়ালীদ আপনি তো সবকিছু শুনলেন। এখন আপনার যা বিবেচনা হয় করুন’।
এরপর ওৎবা উঠে গেলেন। কুরায়েশ নেতারা সাগ্রহে ওৎবার কাছে জমা হলে তিনি বললেন, নেতারা শুনুন! আমি মুহাম্মাদের মুখ থেকে এমন বাণী শুনে এসেছি, যা কোন কাহিনী নয়, কবিতা নয় বা জাদুমন্ত্র নয়। সে এক অলৌকিক বাণী। আপনারা আমার কথা শুনুন! মুহাম্মাদকে বাধা দিবেন না। তাকে তার পথে ছেড়ে দিন’। লোকেরা হতবাক হয়ে বলে উঠলো ‘আল্লাহর কসম হে আবুল ওয়ালীদ! মুহাম্মাদ তার কথা দিয়ে তোমাকে জাদু করে ফেলেছে।’
পুনরায় আবু তালিব সমীপে নেতাগণ (৬ষ্ঠ নববী বর্ষে):
(৩) হুমকিতে ও লোভনীয় প্রস্তাবে কোন কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নেতারা অল্প দিনের মধ্যে পুনরায় তার কাছে এক অভিনব প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। তারা ওয়ালীদ বিন মুগীরাহ এর পুত্র ওমারাহ-কে সাথে নিয়ে গেলেন এবং আবু তালিবকে বললেন, হে আবু তালিব! এই ছেলেটি হল কুরায়েশদের সবচেয়ে সুন্দর ও ধীমান যুবক। আপনি একে পুত্ররূপে গ্রহণ করুন এবং মুহাম্মাদকে আমাদের হাতে সোপর্দ করুন। কেননা
‘মুহাম্মাদ আপনার দ্বীন ও আপনার বাপ-দাদার দ্বীনের বিরোধিতা করেছে এবং আপনার সম্প্রদায়ের জামাআতী ঐক্য বিনষ্ট করেছে এবং তাদের জ্ঞানীদেরকে বোকা বলেছে। অতএব আমরা তাকে হত্যা করব’।
একজনের বদলে একজন হিসাবে এই ছেলেটিকে এনেছি মুহাম্মাদের বিনিময়ে আপনাকে দেবার জন্য।’ একথা শুনে ক্রুদ্ধ আবু তালেব রাগতঃস্বরে বলে উঠলেন,
‘আল্লাহর কসম! তোমরা কতবড় জঘন্য কথা আমাকে বলেছ। তোমরা তোমাদের ছেলেকে দিচ্ছ, যাতে আমি তাকে খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করি। আর আমার সন্তানকে তোমাদের হাতে তুলে দেব যাতে তোমরা তাকে হত্যা করতে পার? আল্লাহর কসম! তা কখনোই হবার নয়। …যাও তোমরা যা খুশী করতে পার’।
(৪) আবু তালেবের কাছ থেকে নিরাশ হওয়ার পর গোত্রনেতারা বসে আবু তালেবের গোত্র বনু হাশেম ও বনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের সঙ্গে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন এবং ৭ম নববী বর্ষের ১লা মুহাররম হতে একটানা তিন বছর উক্ত বয়কট অব্যাহত থাকে। বয়কট শেষে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) পুনরায় স্বাভাবিকভাবে তাওহীদের দাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকেন।
এ সময় একদিন যখন তিনি কা‘বা ত্বাওয়াফ করছিলেন, তখন অলীদ বিন মুগীরাহ, ‘আছ বিন ওয়ায়েল, আসওয়াদ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব, উমাইয়া ইবনে খালাফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট নেতৃবর্গ এসে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রস্তাব দেন ‘এসো আমরা ইবাদত করি, যার তুমি ইবাদত কর এবং তুমি ইবাদত কর, যার আমরা ইবাদত করি। তাতে আমরা ও তুমি আমাদের উপাসনার কাজে অংশীদার হব’।
যদি দেখা যায় যে, তোমার মা‘বূদ আমাদের মা‘বূদের চেয়ে উত্তম, তাহলে আমরা তার থেকে উত্তমটুকু গ্রহণ করব। আর যদি দেখা যায় যে, আমাদের মা‘বূদ তোমার মা‘বূদ থেকে উত্তম, তাহলে তুমি তার থেকে উত্তমটুকু গ্রহণ করবে’। তখন আল্লাহ সূরা কাফেরূণ নাযিল করেন।
শেষ বারের আগমন (১০ম নববী বর্ষে):
(৫) হুমকি, লোভনীয় প্রস্তাব ও বয়কট কোনটাতে কাজ না হওয়ায় এবং ইতিমধ্যে হামযাহ ও ওমরের ইসলাম গ্রহণ করায় এবং আবু তালিবের স্বাস্থ্যহানির খবর শুনে মক্কার নেতারা শেষবারের মত তাঁর সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেন। সেমতে আবু জাহল, আবু সুফিয়ান, উমাইয়া বিন খালাফ, ওৎবা ও শায়বা বিন রাবী ‘আহ সহ প্রায় ২৫ জন নেতা আবু তালেবের কাছে আসেন এবং বলেন, হে আবু তালেব! আপনি যে মর্যাদার আসনে আছেন, তা আপনি জানেন। আপনার বর্তমান অবস্থাও আপনি বুঝতে পারছেন।
আমরা আপনার জীবনাশংকা করছি। এমতাবস্থায় আপনি ভালভাবে জানেন যা আমাদের ও আপনার ভাতিজার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এক্ষণে আপনি তাকে ডাকুন এবং উভয় পক্ষে অঙ্গীকার নিন যে, সে আমাদের ও আমাদের দ্বীন থেকে বিরত থাকবে এবং আমরাও তার থেকে বিরত থাকব। তখন আবু তালেব রাসূল (সাঃ)-কে ডাকালেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) তাদের সম্মুখে এসে বললেন,
‘হাঁ, একটি কলেমার ওয়াদা আপনারা আমাকে দিন। তাতে আপনারা আরবের বাদশাহী পাবেন এবং অনারবরা আপনাদের অনুগত হবে’। আবু জাহ্ল খুশী হয়ে বলে উঠল, তোমার পিতার কসম, এমন হলে একটা কেন দশটা কলেমা পাঠ করতে রাযী আছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন
‘আপনারা বলুন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং এতদ্ব্যতীত যাদের পূজা করেন, সব পরিত্যাগ করুন’।
তখন সবাই দু’হাতে তালি বাজিয়ে বলে উঠলো ‘সব উপাস্য বাদ দিয়ে তুমি একজন উপাস্য চাও? নিশ্চয়ই তোমার এ কাজ বড়ই বিস্ময়কর!’ অতঃপর তারা একথা বলতে বলতে চলে গেল যে,‘চলো! তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার ধর্মের উপরে চলতে থাক, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদের ও তার মধ্যে একটা ফায়ছালা করেন’। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ সূরা ছোয়াদের ১ হতে ৭ আয়াত সমূহ নাযিল করেন-
ص- وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ- بَلِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ عِزَّةٍ وَّشِقَاقٍ- كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِم مِّنْ قَرْنٍ فَنَادَوْا وَلاَتَ حِيْنَ مَنَاصٍ- وَعَجِبُ وْا أَنْ جَاءَهُمْ مُّنْذِرٌ مِّنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُوْنَ هَذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ- أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهاً وَاحِداً إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ- وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْ هُمْ أَنِ امْشُوْا وَاصْبِرُوْا عَلَى آلِهَتِكُمْ إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ- مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِيْ الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَذَا إِلاَّ اخْتِلاَقٌ-
(i) ছোয়াদ- শপথ উপদেশপূর্ণ কুরআনের
(ii) বরং কাফের দল অহমিকা ও হঠকারিতায় লিপ্ত
(iii) তাদের পূর্বেকার বহু জনগোষ্ঠীকে আমরা ধ্বংস করেছি। তারা আর্তনাদ করেছে। কিন্তু নিষ্কৃতি লাভের উপায় তাদের ছিল না
(iv) তারা বিস্ময়বোধ করে যে, তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী আগমন করেছেন। আর কাফেররা বলে এতো একজন জাদুকর ও মহা মিথ্যাবাদী
(v) সে কি বহু উপাস্যের বদলে একজন উপাস্যকে সাব্যস্ত করে? নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার
(vi) তাদের নেতারা একথা বলে চলে যায় যে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদের পূজায় দৃঢ় থাকো। নিশ্চয়ই (মুহাম্মাদের) এ বক্তব্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত
(vii) আমরা তো আমাদের সাবেক ধর্মে এ ধরনের কোন কথা শুনিনি। এটা মনগড়া উক্তি ভিন্ন কিছুই নয়’।
মৃত্যুকালে আগমন (১০ নববী বর্ষে):
(৬) শেষবার নেতারা এসেছিলেন আবু তালিবের মৃত্যুকালে, যেন তিনি তাওহীদের কালেমা পাঠ না করেন ও বাপ-দাদাদের ধর্মে শিরকের উপর মৃত্যুবরণ করেন, সেটা নিশ্চিত করার জন্য। বস্ত্তত একাজে তারা সফল হয়েছিলেন। রাসূলের শত আকুতি উপেক্ষা করে সেদিন আবু তালেব আবু জাহলের কথায় সায় দিয়ে শিরকের উপর মৃত্যুবরণ করেন।
                               
Previous Post Next Post